স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ ছাড়া যারা ক্ষমতায় এসেছে তারা দেশের জন্য কী করেছে এবং মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কী পদক্ষেপ নিয়েছে, সেটি চিন্তা করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে রাজধানীর কাওলায় হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তব্যে এ আহ্বান জানান তিনি।
আওয়ামী লীগ সবসময় জনগণের কল্যাণে কাজ করেছে এবং অধিকার রক্ষার আন্দোলনে সংগ্রাম করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ দেশের প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামের অর্জন এই দলের আত্মত্যাগের ফসল। আমাদের দুর্ভাগ্য পঁচাত্তরে জাতির পিতাকে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিলো তারা আমাদের চেতনাকেই মুছে ফেলতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে তারা ছিনিমিনি খেলতে চেয়েছিল। বাংলাদেশ যাতে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে সেটাই ছিল তাদের ষড়যন্ত্র।
খালেদা জিয়া কখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তার মনে ছিল পাকিস্তান, জিয়া এবং সে পাকিস্তানের ধারাবাহিকতা নিয়ে চলতে চেয়েছিল। তাই জাতির পিতার হত্যাকারীকে ভোট চুরি করে সংসদে বসিয়েছিল। আর আলবদর, রাজাকার যুদ্ধাপরাধী এদেশের গণহত্যা চালিয়েছে, মা-বোনকে ধরে নিয়ে হানাদারবাহিনী পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে দিয়েছে; গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে ছারখার করে দিয়েছে। তাদেরই জিয়া, খালেদা জিয়া ক্ষমতায় বসিয়েছে। কাজেই এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে তাদের কোনও অবদান নেই এবং তারা সেটি করতেও চায় না।
‘ভোট নিয়ে খেলা, ভোট চুরি, মানুষের ভাগ্য নিয়ে খেলা- এটাই তারা করে গেছে। আর আওয়ামী লীগের অনেক সংগ্রামের পথ পেয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করেছি এবং গণতান্ত্রিক ধারা অব্যাহত থাকলে পরে একটি দেশে যে উন্নতি হয়, আর যারা গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে তারা ক্ষমতায় থাকলে যে দেশের উন্নতি হয় সেটা আমরা প্রমাণ করেছি।’
এসময় দেশবাসীর প্রতি প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, যেখানে জাতির পিতা মাত্র সাড়ে ৩ বছরে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে রেখে গিয়েছিলেন, পঁচাত্তরের পর ২১ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়া- এরপর আবার ২০০১ থেকে ২০০৮-খালেদা জিয়া এবং তত্ত্বাবধায়ক সরকার; এই ২৯ বছর যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা দেশের জন্য কী করেছে? মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে কী করেছে? সেটাই একবার চিন্তা করে দেখবেন। অনেকেই অনেক বড় বড় কথা বলেছে, কিন্তু দেশের মানুষের জন্য কিছুই করেনি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ৯৬ সালে যখন সরকার গঠন করি তখন বিদ্যুৎ ছিল ১৬০০ মেগাওয়াট। বিদ্যুতের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে বিএনপি কানসাটে মানুষকে গুলি করে হত্যা করে। ঢাকা শহরে বিদ্যুৎ, পানির অভাব। এজন্য বিএনপির এক নেতাকে জনগণ ধাওয়া দিয়েছিল। যার নামই হয়ে গিয়েছিলো দৌড় সালাউদ্দিন। পাবলিকের ধাওয়া খেয়ে সে পালিয়েছিল। কারণ খালেদা জিয়া জনগণের চাওয়া পূরণ করতে পারেনি। ৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারে এসে ১৬০০ থেকে ৪৩০০ মেগাওয়াটে বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াই।
তিনি বলেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় এসেছিল বিএনপি। এই প্রস্তাব আমার কাছেও এসেছিল। আমি বলেছিলাম, আমি শেখ মুজিবের মেয়ে দেশের স্বার্থ কখনও বেচি না, ক্ষমতার লোভ করি না। খালেদা জিয়া এসে গ্যাস তো দিতেই পারেনি, বাংলাদেশকে পাঁচবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে। বিদেশ থেকে টাকা এসেছে এতিমখানার জন্য, এতিমরা পায়নি, নিজে মেরে দিয়েছে। এতিমের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঞ্চালনায় এতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের নেতারা অংশ নেন।
এর আগে, বেলা সোয়া ৩টার পর হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল উদ্বোধন উপলক্ষে রাজধানীতে ক্ষমতাসীনদের জনসমাবেশে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসময় নেতাকর্মীরা তাকে স্লোগানে স্লোগানে স্বাগত জানান। নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছার জবাব দেন প্রধানমন্ত্রী।
এ জনসভাটি গত শনিবার হওয়ার কথা থাকলেও বৃষ্টির কারণে তারিখ পরিবর্তন হয়। ফলে আজ কাওলায় হয় সমাবেশ।
জনসভাকে কেন্দ্র করে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি জানান দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে উৎসবের আমেজ, ভোটের আবহ। নগরীর নানা প্রান্ত থেকে মিছিল নিয়ে সমাবেশ মাঠে জড়ো হয়েছেন নেতাকর্মীরা। পুরো জনসভাস্থল রূপ নেয় জনসমুদ্রে।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।